আদালতে জালিয়াতির অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার হওয়া মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সী রুহুল আসলাম’র বিরুদ্ধে অসংখ্য অনিয়মের অভিযোগ ।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র (আন্তঃপ্রাথমিক) কমমূল্যে ছেপে কয়েকগুণ বাড়তি টাকায় বিক্রির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকায় হাতিয়ে নেয়া, শিক্ষকদের শোকজের নামে হাজার হাজার টাকা আদায়, মাতৃকালীন ছুটি অনুমোদনের জন্য মোটা অংকের টাকা আদায়, শিক্ষকদের ব্যাংকলোনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে টাকা আদায়, নৈশ প্রহরী কাম দপ্তরীদের বেতন ভাতা সংশোধনের নামে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়া, শিক্ষকদের ডেপুটেশনের জন্য টাকা আদায়, উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা কাজ না করেই উত্তোলনসহ অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী সম্প্রতি এ অভিযোগ করেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র মেরামতের নামে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার ৪৮ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকক্ষ মেরামতের জন্য এক থেকে দুই লাখ টাকা করে সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়। এসকল বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অধিকাংশ বিদ্যালয়ে কোন প্রকার মেরামতের কাজ না করেই অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সী রুহুল আসলামের বিরুদ্ধে।
এছাড়াও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আসবাবপত্রসহ মেরামতের কাজের জন্য ‘রুটিন মেরামত’ বাবদ বাৎসরিক ৪০ হাজার টাকা অর্থ বরাদ্দ হয় প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এর মধ্যে বাড়তি চাহিদা দিয়ে দিয়ে কোন কোন বিদ্যালয়ের জন্য সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করেও কোন মেরামতের কাজই বিদ্যালয়গুলোতে হয়নি। নামেমাত্র মেরামত করে যোগসাজসে প্রতিটি বিদ্যালয় থেকেই মোটা অংকের অর্থ আত্মসাত করেছেন বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রতিটি বিদ্যালয়ে বছরে শিক্ষার্থী অনুপাতে ‘স্লিপ’ বাবদ গড়ে ৭০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ হয়। বরাদ্দকৃত টাকা বিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যানে ব্যয় হয়ে থাকে। তবে অযাচিত ভাউচার দেখিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা প্রতিটি বিদ্যালয় থেকেই মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, ‘স্লিপ বাবদ বরাদ্দ হওয়া টাকার ভ্যাট কর্তনের পর ৩০/৪০% টাকা শিক্ষা কর্মকর্তা কেটে রাখেন। বাকী টাকা বিদ্যালয়ে দেয়া হয়। এক্ষেত্রে প্রতিবাদ করার কোন সুযোগ থাকে না।’
এদিকে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেনির শিক্ষার্থীদের জন্য বছরে ১০ হাজার টাকা সরকারি বরাদ্দ হয়। এই টাকার বড় একটি অংশ তিনি নিজে রেখে বাকী টাকা স্কুলের জন্য দেয়া হয়। এছাড়া বিদ্যালয়ের ওয়াশব্লক মেরামত ও নির্মান ব্যয় বাবদ অর্থ আত্মসাৎ এবং উপজেলার দশটি বিদ্যালয়ে খেলাধুলার জন্য ‘নিড বেসড প্লেইং’ নির্মান বাবদ বরাদ্দকৃত দেড় লক্ষ টাকা নিজে উত্তলোন করে নিজেই দোকান থেকে নিন্মমানের উপকরণ দিয়ে তৈরি করিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেন। অভিযোগ রয়েছে বিদ্যালয়ে প্রদানকৃত প্রতিটি খেলনার বাজার মূল্য সর্বোচ্চ ৫০/৫৫ হাজার টাকা!
এছাড়াও বিদ্যালের কতিপয় শিক্ষকদের ঠিকাদারি, দোকান, ব্যবসায়সহ নানা সুবিধা দিয়ে মাসে মাসে উৎকুচ আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) উত্তম কুমার পাল মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। এবিষয়ে আমি অবগত নই। তবে এরকম দুর্নীতি করার কোন সুযোগ নেই। আশকরি, সামনে এমন কোন ঘটনা ঘটবে না।’
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’