দিনাজপুরে ফুলবাড়ী উপজেলার জয়নগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের যোগসাজসে তাদের মনোনিত ব্যক্তিকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগদানের চেষ্ঠার প্রতিবাদে বিক্ষোভসহ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারি-অভিভাবকসহ এলাকাবাসী।
গতকাল সোমবার (১০ জুন) সকাল ১১ টায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারি ও অভিভাবকসহ এলাকাবাসী বিদ্যালয় চত্বরে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালনসহ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে দাবির সমর্থনে বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি মো. রায়হান আলী, সহকারী শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি মোছা. তাহেরা বেগম, সহকারী শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি মো. শাহানুর আলম, সহকারী শিক্ষক ওয়াহেদ আলী, সহকারী শিক্ষক আশরাফুল আলম, বিদ্যালয়ের জমিদাতা আফজাল তালুকদার, অভিভাবক মোহাম্মদ আলম, এজাজ মন্ডল, শিক্ষার্থী নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার, ফাহারিয়া আক্তার রিয়া, জান্নাতুন তাজরিন, মোহনা জান্নাত, ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী স্নিগ্ধা আক্তার ইতিমনি, তাজমুন নাহার রীতা প্রমুখ। মানবন্ধন শেষে বিদ্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল প্রদর্শন করেন অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারি ও অভিভাবকসহ এলাকাবাসী।
জয়নগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি মোঃ রায়হান আলী, সহকারী শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি মোছা. তাহেরা বেগম ও সহকারী শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি মো. শাহানুর আলম বলেন, ম্যানেজিং কমিটিকে পাশ কাটিয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্বাস উদ্দিন মন্ডল ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুনীল চন্দ্র রায় যোগসাজস করে সরকারি বিধি বহির্ভূতভাবে পার্শ্ববর্তী বিরামপুরের মোহনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মামুনুর রশিদকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের পাঁয়তারা করছেন। গত ১৮/০৫/২০২৪ ইং তারিখের ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তে প্রধান শিক্ষকের পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও সেই সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে এবং কমিটির কাউকে কোনো কিছু না জানিয়ে গোপনে মামুনুর রশিদকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য আজ সোমবার (১০ জুন) সকাল ১০টায় দিন ধার্য করেন প্রধান শিক্ষক ও কমিটির সভাপতি। এজন্য আবেদনকারিদের কাউকে মৌখিকভাবে আবার কাউকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারি-অভিভাবকসহ এলাকাবাসী বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন। এরই অংশ হিসেবে তারা অবৈধ প্রক্রিয়া মামুনুর রশীদকে প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগের উদ্যোগ বন্ধসহ অবৈধ পন্থা অবলম্বনকারিদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভসহ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। তবে বিক্ষোব ও মানববন্ধনের জন্য সকালে নিয়োগ পক্রিয়া স্থাগিত করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। তবে বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ ১১/০৬/২০২৪ ইং তারিখ মঙ্গলবার শেষ হয়ে যাবে। এ কারণে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক তড়িঘড়ি করে নিয়োগ পক্রিয়া শেষ করে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।
বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী সুরাইয়া আক্তার রিতু ও রিক্ত চন্দ্র রায় বলে, কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে তারা চায় না। মামুনুর রশিদকে নিয়োগ দেওয়া হলে তারা বিদ্যালয়ে তারা ঝুঁলিয়ে দেবে। অভিভাবক মোহাম্মদ আলম ও এজাজ ম-ল বলেন, কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে দেবে এলাকাবাসী। স্বচ্ছ ও সরকারি বিধি মোতাবেক একজন যোগ্য ব্যক্তিকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দিতে হবে। এটা করা না হলে এলাকাবাসী বিদ্যালয়ে তালা ঝুঁলিয়ে দিতে বাধ্য হবেন।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুনীল চন্দ্র রায়কে তার ০১৩০৯ ১২০৪২৩ এবং ০১৭৬১ ৩৮১৮৭৯ নম্বরে মুঠোফোন একাধিকবার ফোন করা হলে দুইটি মুঠোফোনেরই সুইচ বন্ধ পাওয়া যায়।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্বাস উদ্দিন মন্ডলের ০১৭৪৭ ৫৪৭৭২৫ নম্বরের মুঠোফোনে ফোন করা হলে ফোনে রিং বাজলেও তিনি ফোন গ্রহণ করেননি। ফলে এ ব্যাপারে তার কোনো বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার মহাপরিচালকের প্রতিনিধি বিরামপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যায়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেক মুঠোফোনে বলেন, ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে মৌখিকভাবে বলেছেন, তবে লিখিতভাবে এখনও জানাননি। ফলে এ বিষয়ে কোনো কিছু জানেন না তিনি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর আলম বলেন, মৌখিকভাবে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে বলা হলেও লিখিতভাবে কোনো কিছু বলা হয়নি। ফলে নিয়োগ হবে কি না তাও তিনি জানেন না।
জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ জাফর আরিফ চৌধুরী বলেন, ওই বিদ্যালয়ে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসেবে তাকে লিখিতভাবে কোনো কিছু জানানো হয়নি। ফলে তিনিও জানেন না নিয়োগ হবে কি না।