দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর পার্শ্ববর্তী বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে কয়লা উত্তোলনে ডিনামাইট বিস্ফোরণের কম্পনে খনি সংলগ্ন চৌহাটি এলাকার পাতিগ্রাম ও পাঁচঘরিয়া গ্রামের ঘরবাড়িতে ফাটল ধরেছে। ফাটল ধরা ঘরবাড়ীর ক্ষতিপূরণসহ ৮ দফা দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।
১৫ জুলাইয়ের মধ্যে ৮ দফা দাবি পূরণ করা না হলে আগামীতে কঠোর আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার আল্টিমেটাম ঘোষণা করা হয়েছে মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে।
বুধবার (৩ জুলাই) সকাল ১০ ঘটিকায় বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি সংলগ্ন ক্ষতিগ্রস্ত চৌহাটি এলাকার পাতিগ্রাম ও পাঁচঘরিয়া গ্রামবাসীর সংগঠন ‘জীবন ও বসত ভিটা রক্ষা কমিটি’র উদ্যোগে চৌহাটি বাজার এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামের নারী ও পুরুষরা ক্ষতিপূরণসহ ৮ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিল শেষে চৌহাটি বাজারে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ভূগর্ভের কয়লা উত্তোলনে ডিনামাইট বিস্ফোরণের কম্পনে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জীবন ও বসত ভিটা রক্ষা কমিটি’র সভাপতি মোঃ মতিয়ার রহমান, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আমিনুল ইসলাম, সংগঠনের উপদেষ্টা শাহ্ মোঃ এনামুল হক মাস্টার, সহকারী অধ্যাপক শাহ্ ইনতেজামুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান মোঃ আতাউর রহমান, মোঃ সাইদুর রহমান মোঃ আনসার আলী, হরিদাস, কালু মন্ডল প্রমুখ।
এ সময় গ্রামবাসীর ৮ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। দাবির মধ্যে রয়েছে, খনির কয়লা উত্তোলনের কারণে ফাটল ধরা ঘরবাড়ীর ক্ষতিপূরণ প্রদান, বসবাসের পুর্ণনিশ্চয়তা প্রদান, সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার প্রত্যেক বাড়ী থেকে ছেলেমেয়েদের খনিতে চাকরি দেওয়া, বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা, ফসলি জমিতে ফসল উৎপাদনের উপযুক্ত করে দেওয়া, কয়লাখনি গেট থেকে চৌহাটি গ্রামের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত রাস্তাটি চলাচলের উপযোগী করা এবং বসবাসের অনুপযোগী ঘরবাড়ীকে বসবাসের উপযোগী করে সংস্কার করা।
আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে ৮ দফা দাবি পূরণ না হলে কঠোর আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার আল্টিমেটাম ঘোষণা করা হয়েছে। মানববন্ধন কর্মসূচিতে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীর নারী ও পুরুষসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
জীবন ও বসত ভিটা রক্ষা কমিটি’র সভাপতি মোঃ মতিয়ার রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ভূগর্ভের কয়লা উত্তোলনে ডিনামাইট বিস্ফোরণের কম্পনে খনি সংলগ্ন চৌহাটি এলাকার পাতিগ্রাম ও পাঁচঘরিয়া গ্রামের প্রায় এক হাজার বসত ঘরবাড়ীতে বড় বড় ফাটল ধরায় ওইসব ঘরবাড়ী যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে। এতে বসবাসকারী পরিবারের লোকজনের প্রাণহানি ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরপরও কোনো উপায়ান্ত না থাকায় গ্রামবাসী জীবনের ঝুঁকির মধ্যেই পরিবারের লোকজনকে নিয়ে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত ঘরবাড়ীতে ফাটলসহ দেবে যাচ্ছে। এ কারণে গ্রামবাসী তাদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণসহ ৮ দফা দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু খনি কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে বারংবার তাগিদ দেওয়ার পরও তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। অথচ কয়লা উত্তোলনের কারণে এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কবরস্থান, রাস্তাঘাটসহ সবই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। চলাচলের রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিতে গ্রামে অ্যাম্বুলেন্সও আসতে চায় না। নলকূপে পানি উঠছে না। এসব সমস্যার দ্রম্নত সমাধান করতে হবে। বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানী লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মোঃ সাইফুল ইসলাম সরকার বলেন, খনির ভূগর্ভ থেকে কয়লা উত্তোলনের ফলে আশপাশের এলাকায় কম্পন অনুভূত হয়ে থাকে। এতে ঘরবাড়ীতে কিছু ফাটল দেখা দিতে পারে তবে দুর্বল নির্মাণ কাজের ঘরবাড়ীতে এটি বেশি দেখা দিয়ে থাকে। এলাকাবাসীর ঘরবাড়ীতে ফাটল দেখা দেওয়াসহ ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়ে খনি কর্তৃপক্ষের একটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তীতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে।