দিনাজপুরে ফুলবাড়ী উপজেলার পার্শ্ববর্তী বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি সংলগ্ন ক্ষতিগ্রস্ত ১৩টি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী তাদের ক্ষতিপূরণের ৬ দফা দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে। রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় খনির গেটের সামনে বিক্ষোভ-সমাবেশসহ ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী।
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি আদায় বাস্তবায়ন সমন্বয় কমিটির সভাপতি মোঃ গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে ৬ দফা দাবিতে খনির গেটের সামনে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ১৩টি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী।
বিক্ষোভ প্রদর্শন শেষে ৬দফা দাবিতে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে ৬ দফা দাবির ন্যায্যতা ও যৌক্তিকতা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি আদায় বাস্তবায়ন সমন্বয় কমিটির সভাপতি মোঃ গোলাম মোস্তফা, সিনিয়র সহ-সভাপতি আলী হোসেন, সহ-সভাপতি রবিউল ইসলাম মন্ডল, সাধারণ সম্পাদকআলী বেরুনী, সাতার ইকবার নয়ন, আবেদ আলী, সাইদুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান, সাইফুল ইসলাম, গোলাম রব্বানী, আব্দুর রহমান বাচ্চু, রবিউল ইসলাম, রেজাউল ইসলাম, হোসেন আলী, মহারাজ, মেনহাজুল ইসলাম, আব্দুর রশিদ মন্ডল, বিপ্লব হোসেন ও মমিদুল ইসলাম, তোফাজ্জাল হোসেন, বাবু , মফিজুল ইসলাম প্রমুখ।
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি আদায় বাস্তবায়ন সমন্বয় কমিটির সভাপতি মো. গোলাম মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদকআলী বেরুনী বলেন, খনির কারণে ফাটল ধরা এবং বসবাসের অনুপযোগী ঘরবাড়ীতেই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন গ্রামবাসী। যা যেকোনো সময় বড় ধরনের হতাহতের ঘটনার কারণ হতে পারে। খনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের সম্পাদিত চুক্তির দীর্ঘ ৫ বছরেও কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করেননি। উপরোন্ত বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগ দেওয়া হলেও চুক্তি অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীর প্রত্যেক পরিবার থেকে একজন করে চাকরি দেওয়ার কথা কিন্তু এখন পর্যন্ত একজনকেও চাকরি দেওয়া হয়নি। ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কয়লাখনির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে লিখিতভাবে জানানোর পরও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আগামী সাতদিনের মধ্যে ছয় দফা দাবি পূরণ করা না হলে কয়লাখনি ঘেরাওসহ কঠোর আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী।
ক্ষতিগ্রস্তদের ৬ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, খনি কর্তৃপক্ষের সাথে সম্পাদিত সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবার থেকে খনিতে চাকরির ব্যবস্থা করা, খনির ভূগর্ভ থেকে পাথর উত্তোলনের জন্য ভূকম্পনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ঘরবাড়ীতে ব্যাপক আকারে ফাটল ধরাসহ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে সেই সব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পুনর্বাসন করা, ক্ষতিগস্ত এলাকার ভূমিহীন প্রত্যেকটি পরিবারকে উন্নতমানের বাসস্থান তৈরি করে দেওয়া, ক্ষতিগ্রস্তদের এককালীন অবশিষ্ট ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদান করা, ক্ষতিগ্রস্তদের বিশুদ্ধ পানীয়জলের ব্যবস্থাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও রাস্তা পুনর্নিমাণ করা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে যাদের জমির ভূগর্ভ থেকে কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে সেই সব জমির মালিককে ভূগর্ভ থেকে উত্তোলিত কয়লার বোনাস হিসেবে শতকরা ৫ ভাগ প্রদান করা।
বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানী লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মোঃ সাইফুল ইসলাম সরকার বলেন, খনির ভূগর্ভ থেকে কয়লা উত্তোলনের ফলে আশপাশের এলাকায় কম্পন অনুভূত হয়ে থাকে।
এতে ঘরবাড়ীতে কিছু ফাটল দেখা দিতে পারে তবে দুর্বল নির্মাণ কাজের ঘরবাড়ীতে এটি বেশি দেখা দিয়ে থাকে।এলাকাবাসীর ঘরবাড়ীতে ফাটল দেখা দেওয়াসহ ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়ে সার্ভে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলোতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করেছেন। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।