দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে খাদ্যের সন্ধ্যানে লোকালয়ের ঘুরে বেড়ানোসহ বাসাবাড়ীতে অবস্থান নিচ্ছে দলছুট মুখপোড়া হনমুন। বড় গাছে, বাসাবাড়ী বা প্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রাচীরের ওপরে ও ঘরের চালে দেখা যাচ্ছে এই দলছুট মুখপোড়া হনুমানটিকে। যেখানে যাচ্ছে হনুমানটি সেখানেই ভিড় জমছে কৌতূহলী মানুষ। দিচ্ছেন পাউরুটি, গাজর, আলু, কলা ও বিভিন্ন ফলসহ নানান খাবার।
গতকাল সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে ফুলবাড়ী পৌরশহরের উপজেলা পরিষদ রোডের চকচকা এলাকার বাসিন্দা গণমাধ্যমকর্মী সহকারী অধ্যাপক অমর চাঁদ গুপ্ত অপু’র বাসাবাড়ীর সীমানা প্রাচীরের ওপর বসে থাকতে দেখা মিলে হনুমানটির।
বাড়ীর সীমানা প্রাচীরের ওপর অবস্থানকালে অমর চাঁদ গুপ্ত অপু, তার স্ত্রী রীতা রানী কানু ও তার ছেলে অংকুর গুপ্ত হনুমানটিকে খাবার জন্য গাজর, আলুসহ বিভিন্ন প্রকার ফল দেন। এ সময় প্রাচীরের ওপর খাদ্যের সঙ্গে এক বাটি পানিও রাখা হয়। ফলমূল খাওয়া শেষে পানি খেয়ে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করার পর সেখান থেকে ছুটছে কখনো বিল্ডিংয়ের ছাদে, কখনো গাছের মগডালে এবং কখনো বাসাবাড়ীর সীমানা প্রাচীর অথবা ছাদে, আবার কারো টিনের চালে। হনুমানটিকে এক নজর দেখতে উৎসুক মানুষও ছুটছে পিছু পিছু। মানুষ দেখে হনুমানও অস্থিরতাবোধ করছে।
দেখা যাচ্ছে, হনুমানটিকে কেউ বিরক্ত করলে সে মুখে ভেংচি কেটে ভয় দেখাচ্ছে। আবার হু হু করে গর্জন দিচ্ছে। ইতোপূর্বে উপজেলার বেতদিঘী ইউনিয়নের মেলাবাড়ী পরবর্তীতে খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের লালপুরে এবং বর্তমানে পৌরএলাকায় দেখা যাচ্ছে হনুমানটিকে।তবে বন্যপ্রাণী লোকালয়ে নয়, সংরক্ষণের দাবি সচেতন মহলের।
এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী সৈয়দ হোসেন ভুট্টু বলেন, হঠাৎ করেই দুপুর রীতা রানী কানু’র বাড়ীর সীমানা প্রাচীরের ওপর দেখা যায় হনুমানটিকে। এটি একটি মুখপোড়া হনুমান। উৎসুক মানুষজন হনুমানটিকে গাজর, আলু, কলা, পাউরুটি, বিস্কুটসহ নানা খাবার খেতে দিচ্ছেন। হনুমানটির মধ্যে শান্ত ভাব রয়েছে। কারো কোনো ক্ষতি করছে না। খাবার খেয়ে সে এক গাছ থেকে অন্য গাছে চলে যাচ্ছে। পরে আর দেখা মিলেনি।
হনুমানটি প্রথমবারের মতো দেখতে পাওয়া শিশু-কিশোর পুলক গুপ্ত, অংকুর গুপ্ত ও দেব গুপ্ত পাগলু বলে, আমাদের বাড়ীর সমীমানা প্রাচীরের ওপর বসে থাকতে দেখা যায় হনুমানটিকে। একে দেখতে বহু মানুষজনসহ পথচারী জমে যায়। আমরা প্রথমবারের মতো এতো কাছ থেকে হনুমান দেখেছি। আগে চিরিয়াখানায় দেখেছিলাম কিন্তু আজ সামনাসামনি বাড়ীর সীমানা প্রাচীরে বাসে খাদ্য খেতে দেখলাম। প্রথমে ভয়ে কেউ কাছে যাচ্ছিলাম না। কিন্তু পরে খাবার নিয়ে গেলে হনুমানটি এসে শান্ত মনে হাত থেকে খাবার নিয়ে খেয়েছে।
গণমাধ্যমকর্মী সহকারী অধ্যাপক অমর চাঁদ গুপ্ত অপু বলেন, হনুমানটি বাড়ীর সীমানা প্রাচীর ওপর অবস্থানকালে প্রথমে জবা ফুলের পাতা খেতে শুরু করে পরে তাকে গাজর, আলু ও কলা দেওয়া হলে সে সেগুলো খেয়ে ফেলে। পরে বাটিতে পানি দেওয়া হলে সেটিও সে পান করে। এক সময় সে নিজেই সেখান থেকে চলে যায়।
মধ্যপাড়া বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা উজ্জ্বল হোসাইন বলেন, দলছুট হয়ে লোকালয়ে আসা হনুমানকে এলাকাবাসী যেন কোনো ক্ষতি বা বিরক্ত না করেন, সে বিষয়ে সবার সচেতনতা দরকার। কিছুদিন পর আবার সে তার এলাকায় ফিরে যাবে। যদি লোকালয়ে হনুমানের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে এটি ধরে বনাঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।