জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, দেশের মানুষের ভোটাধিকার ব্যাপকভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে। ফলে দেশের মানুষ ভোটের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। দেশের মানুষ স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চায়। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ, ভোটাধিকার ও সুষ্ঠু রাজনীতি চায় দেশের মানুষ। আমরা সংসদে, বক্তৃতা ও বিবৃতি দিয়ে গণমানুষের ভোটাধিকারের দাবিতে সোচ্চার আছি। বিদেশীরাও ভোটাধিকারের প্রশ্নে জোড়ালো ভুমিকা রাখছে। এ কারণেই সকল বিষয়ে একটি অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার ৪ অক্টোবর দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর বনানীস্থ কার্যালয় মিলনায়তনে ময়মনসিংহ জেলার উপজেলা প্রতিনিধি সভায় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ময়মনসিংহ জেলা আহ্বায়ক ফখরুল ইমাম এমপি সভাপতিত্বে এবং ভাইস চেয়ারম্যান ও ময়মনসিংহ জেলা সদস্য সচিব সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, ময়মনসিংহ জেলা যুগ্ম-আহবায়ক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান আরজু যৌথ সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ কথা বলেন।
এসময় সাবেক যুগ্ম কর কমিশনার জহিরুল ইসলাম জহির জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর হাতে ফুল দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন।
এসময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, রুপপুর বিদ্যুত কেন্দ্র দেশের জন্য ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে। ক্লিন এনার্জির কারণে এক সময় পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের কদর ছিলো। এখন অনেকেই আর পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র তৈরী করছে না। আবার যাদের তৈরী আছে তারাও বন্ধ করে দিচ্ছে। স্বল্প খরচ ও পরিবেশের ক্ষতি হবেনা এমন ভাবনা থেকেই পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলো। কিন্তু এটা থেকে যে বিকিরণ হয় তা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র একটি বিপদজনক প্রযুক্তি। দুর্নীতি না হলেই এটি সস্তা বিদ্যুত হতে পারে। একই কোম্পানী থেকে ভারত একই মডেলের দুটি পাওয়ার প্লান্ট তৈরী করেছে দুই হাজার মেগাওয়াটের পাঁচ বিলিয়ন ডলার খরচে। আর আমাদের দেশে এই কোম্পানী থেকে ২৪ শো মেগাওয়াটের দুটি স্থাপনে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১৩ বিলিয়র ডলারের বেশি। এই খরচ ১৬ বিলিয়ন পর্যন্ত হতে পারে। যে প্রকল্প তৈরীতে ভারত ৬ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলার খরচ করে, সেই প্রকল্প করতে আমাদের খরচ হচ্ছে ১৫ থেকে ১৬ বিলিয়ন। বেশি খরচ হওয়ার কারনে এই বিদ্যুত তো সস্তা হবে না।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, বর্তমান ইউক্রেনের চেরোনবিল এবং আমেরিকা ও জাপানেও পারমানবিক দুর্ঘটনা ঘটেছিলো। সামান্য দুর্ঘটনায় বিশ কিলোমিটার এলাকায় বিকিরণ ছড়িয়ে পড়ে। বিকিরণ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ঐ এলাকায় কোন প্রাণী বসবাস করতে পারবে না। রাশিয়ার মত দেশ দূর্ঘটনা কবলিত এলাকায় ১০ থেকে ১৫ বছর কাউকে ঢুকতে দেয়নি। আর, বড় ধরনের দুর্ঘটনায় ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিকিরণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। ঐ এলাকা থেকে মানুষ ও পশু-পাখি বের করে দিতে হবে। প্রতিবেশী দেশের সিমান্তবর্তী এলাকার মানুষও আমাদের পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে আতংকে আছে। বাংলাদেশে দুর্ঘটনা এখন স্বাভাবিক ঘটনা। দুর্ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। পারমানবিক দুর্ঘটনা হলে আমাদের মত জনবহুল দেশে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে। অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ এমন প্রকল্প অনেক বেশি ব্যয়ে আমরা স্থাপন করেছি। আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা একটি ঝুকিপূর্ণ দেশ রেখে যাচ্ছি। রাশিয়ান ইঞ্জিনিয়ার ও ভারতীয় কনসাল্টেন্টরা এই প্রকল্প পরিচালনা করবে। বাংলাদেশের কোন ইঞ্জিনিয়ার এর সাথে সম্পৃক্ত নেই। জার্মানী সহ ইউরোপের অনেক দেশ পারমানবিক বিদ্যুত প্রকল্প বন্ধ করে দিচ্ছে। আর আমাদের সরকার ভারতের চেয়ে কয়েকগুন বেশি খরচে এমন ভয়াবহ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, বর্তমান সরকার পার্টির অভ্যান্তরে গ্রুপিং সৃষ্টি করে আমাদের দুর্বল করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। জাতীয় পার্টির একক নেতৃত্ব প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছে সরকার। আমাদের মাতৃতুল্য বেগম রওশন এরশাদকে জিম্মি করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। জাতীয় পার্টি কখনো আপোষের রাজনীতি করবে না। যারা দলের ঐক্য ও শৃংখলা পরিপন্থি কাজ করবে তাদের স্থান আর জাতীয় পার্টিতে হবে না। পার্টির স্বার্থে কোন দ্বিধার কোন অবকাশ নেই। জাতীয় পার্টির ভিতরে অনাস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইলে সরকারেরই বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াবো। অস্তিত্ব আর অধিকার রক্ষার স্বার্থে আমরা আর কারো সাথে আপোষ করবো না।
উপজেলা প্রতিনিধি সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হক চুন্নু এমপি।
উপজেলা প্রতিনিধি সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, শহীদুল ইসলাম স্বপন মন্ডল, আলহাজ্ব নূর উদ্দিন আহমেদ খান সুলতান, কাউন্সিলর মির্জা আবুল কালাম,জাহিদুল ইসলাম পাপ্পু, হাসনাত মাহমুদ তালহা, অধ্যক্ষ এমদাদুল হক খান, আব্দুল মজিদ, এনায়েত হোসেন মন্ডল, শামছুজ্জামান জামাল, আঃ হাদী, গোলাম সারোয়ার তপন, আলহাজ্ব নাজমুল হক সরকার, বদিউজ্জামান প্রিন্স দুলাল, মো: শরীফ উদ্দিন, মোঃ ফজলুল হক ফজলু, হাসমত মাহমুদ তারিক প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট মো: রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ডা: মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ, মো: খলিলুর রহমান খলিল, ভাইস চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, এমএ রাজ্জাক খান, হাফিজ উদ্দিন মাস্টার, আবু সাদেক সরদার বাদল, মাহমুদ আলম, সমরেশ মন্ডল মানিক, কেন্দ্রীয় নেতা আবু সাঈদ আজাদ খুররম ভূঁইয়া।