বিপিএলে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবকে ২-০ গোলে হারিয়ে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বসুন্ধরা কিংস। মতিন মিয়া ও বিপুেলের দুই গোলে হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের আনন্দে মেতে উঠেন বসুন্ধরা কিংসের ফুটবলাররা। ঢাকার ফুটবলে ইতিহাসে বসুন্ধরা কিংস তৃতীয় ক্লাব যারা হাটট্রিক শিরোপা জিতল।
ছিল না দলের প্রাণভোমরা রোবিনহো তবুও কিংসকে আটকাতে পারল না সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব।
৩৭ মিনিটের পর থেকে দশ জনের দল নিয়ে খেলেও সাইফ স্পোর্টিংয়ের বিপক্ষে জিতে দুই ম্যাচ হাতে রেখেই ২০২১-২২ মৌসুমের লিগ শিরোপা জয় নিশ্চিত করেছে বসুন্ধরা কিংস। প্রিমিয়ার লিগে নাম লেখানোর পর এই নিয়ে টানা তিনটি লিগ শিরোপা জিতে হ্যাটট্রিক পূরণ করল কিংস।
আজ সোমবার বিকালে ৪টায় মুন্সিগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় দু’দল।
গোল করেছেন মতিন মিয়া ও বিপলু আহমেদ। ২০ ম্যাচে ৫১ পয়েন্ট নিয়ে লিগ শিরোপা জিতল বসুন্ধরা কিংস। অস্কার ব্রুজোনের অধীনে সবমিলিয়ে ষষ্ঠ শিরোপা জয় করল তারা। এর মধ্যে তিনটি লিগ, দুইটি ফেডারেশন কাপ এবং একটি স্বাধীনতা কাপ।
পায়ের পেশির চোটে এ ম্যাচে ছিলেন না কিংসের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রবসন রোবিনহো। দলে ফিরেন মতিন মিয়া। শুরুর একাদশে ছিলেন না ডিফেন্ডার খালেদ শাফিই, চোট থেকে ফিরে রক্ষণের দায়িত্ব নেন তারিক কাজী। লিগের প্রথম পর্বে কিংস অ্যারেনায় ৪-৩ ব্যবধানে জিতেছিল বসুন্ধরা কিংস। দ্বিতীয় পর্বের ম্যাচের ছড়িয়েছে উত্তেজনা। দুই দলের খেলোয়াড়রা বার বার ফাউল করে উত্তেজনা সৃষ্টি করে।
আক্রমণাত্বক খেলা কিংস শুরুতেই সুযোগ তৈরি করে কিন্তু গাম্বিয়ান নুহা মারংয়ের প্রচেষ্টা আটকে দেন এমেরি বাইসেঙ্গে। ১৬ মিনিটে দারুণ সেভে কিংসকে রক্ষা করেন আনিসু রহমান জিকো। এমেরি বাইসেঙ্গের ফ্রিকিক মানবদেওয়ালে লাগার পর মেরাজের সাইড ভলি ঝাপিয়ে ঠেকিয়ে দেন জিকো, এমফন উদোর ফিরতি শটও ফিরিয়ে দেন তিনি।
২৩ মিনিটে সাইফের রক্ষণ কাঁপিয়ে দেন মিগেল ফিগেইরা। তৌহিদুল সবুজের ব্যাকপাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সের উপর থেকে মিগেলের নেওয়া বাম পায়ের শট ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। ২৭ মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন নুহা মারং। সাইফের ডিফেন্ডার সবুজ হোসেনের কাছ থেকে বল কেড়ে নেন মিগেল, তার বাড়ানো পাস থেকে নুহার দূর্বল শট আটকে দেন পাপ্পু। দূরের পোস্টে শট নিলেই পেতে পারতেন গোল। তবে পরের মিনিটেই গোলের দেখা পায় কিংস। মিগেলের নিঁচু পাস থেকে বল পেয়ে দেখে শুনে ডান পায়ের শটে জাল খুঁজে নেন মতিন মিয়া।
এগিয়ে যাওয়ার পর ৩৪ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ এসেছিল কিংসের সামনে। ডান প্রান্ত থেকে তৌহিদুল সবুজের লম্বা ক্রস বক্সের ভেতর নুহা মারং বুক দিয়ে নামিয়ে দিলে তালগোল পাকিয়ে শটই নিতে পারেননি মতিন মিয়া। ৩৭ মিনিটে দশ জনের দলে পরিণত হয় কিংস। দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন লেফট ব্যাক ইয়াসিন আরাফাত। এর আগে নবম মিনিটে প্রথম কার্ড দেখেন তিনি। দুইবার’ই রহিম উদ্দিনকে ফাউল করেন ইয়াসিন।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে রক্ষণে শক্তি বাড়াতে ফরোয়ার্ড তৌহিদুল সবুজের পরিবর্তে খালেদ শাফিকে মাঠে নামান কিংস কোচ অস্কার ব্রুজোন। এই অর্ধে আক্রমণের চেয়ে রক্ষণে বেশি মনোযোগ ছিল বসুন্ধরা কিংসের। এর মাঝেই ৬৮ মিনিটে ভাল সুযোগ তৈরি করে তারা। কিন্তু ওয়ান অন ওয়ান পজিশনে গোলকিপারকে একা পেয়েও গোল করতে পারেনি নুহা মারং। তিনি হেড করার আগেই বল ক্লিয়ার করেন গোলকিপার পাপ্পু।
৭৫ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে মেরাজ হোসেনের গতির শট গ্লাভসের ছোঁয়ায় ক্রসবারের উপর দিয়ে বের করে দেন জিকো। ৮১ মিনিটে বদলি নামা বিপলুর গোলে ব্যবধান বাড়ায় কিংস। এতে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় সাইফ স্পোর্টিং। শেষ দিকে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা চালায় সাইফের ফরোয়ার্ডরা কিন্তু কিংসের রক্ষণ আর ভাঙতে পারেনি।
ম্যাচ দেখতে মুন্সিগঞ্জে ভিড় জমায় ফুটবলপ্রেমীরা। ম্যাচ দেখতে এসেছিলেন জাতীয় দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরাও। কিন্তু তার বসার জায়গা এতটাই গরম ছিল যে সেখান থেকে তাকে চলে এসে ড্রেসিংরুমের সামনে বসতে হয়। যা দেখতে বেশ দৃষ্টিকটু লেগেছে।
মন্তব্য