জুলাই অভ্যূত্থানে বিরোধীতাকারী বিনা’র ডিজি এখনো বহাল তবিয়তে : অপসারণ দাবী

ফ্যাসিবাদের দোসর বিনা’র ডিজি ড.মোঃ আবুল কালাম আজাদ (ফাইল ছবি)

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যূত্থানে বিরুদ্ধে ও ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পক্ষে প্রকার্শে অবস্থান নেওয়া আওয়ামী মদদপুষ্ট ও সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনসি্টটটিউট (বিনা) এর মহাপরিচালক ড. মোঃ আবুল কালাম আজাদ এখনও বহাল তবিয়তে।

অভিযোগ রয়েছে বিনা’য় কর্মরত বিএনপি পন্থী বেশ কযে়কজন বিজ্ঞানী ড. মোঃ আবুল কালাম আজাদকে মদদ দিচ্ছেন। এতে তারা ব্যক্তিগতভাবে সুবিধা ভোগ করলেও সরকারের আদর্শ ও উদ্দেশ্য চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
সূত্র মতে ড. মোঃ আবুল কালাম আজাদ বিএনপি পন্থী বিজ্ঞানীকে নিজের পক্ষে নিয়ে কৌশলে পতিত স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষেই কাজ করছেন।
তাহার বিরুদ্ধে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়,  আওয়ামী লীগ সরকারের স্বৈরাচারী কর্মকান্ড ও কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার উপরে চালানো বর্বরতা অন্যতম সহযোগী ছিলেন বিনা’র বর্তমান মহাপরিচালক ড. মোঃ আবুল কালাম আজাদ। বিনা’কে তিনি একটি দুর্নীতিগ্রন্ত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করে দুর্নীতিবাজদের আখড়ায় পরিণত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে । সাবেক কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা কৃষিবিদ বাহা উদ্দিন নাসিম ও সদ্য পদত্যাগকারী সাবেক কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার এর মদদপুষ্ট ও বিশ্বস্থ সহচর হওয়ার কারণে ড. মোঃ আবুল কালাম আজাদ বিনা’য় নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করে নিতে সক্ষম হযে়ছেন। অভিযোগ রযে়ছে সাবেক ৩ জন ছাত্রলীগ নেতাকে বিনা’তে বিজ্ঞানী হিসাবে তিনি নিযে়াগ দিয়েছেন। হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা। এই নিযে়াগকৃত ছাত্রলীগ নেতাদেরকে গোপালগঞ্জ, খাগড়াছড়ি ও প্রধান কার্যালয়ে যোগদান করানো হয়েছে। আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিযে়াগের ক্ষেত্রেও তিনি ব্যাপক দুনীতি করেছেন। তার পরিবারের সদস্যকে ল্যাব এসিসটেন্ট পদে নিয়োগ দিয়েছেন। ল্যাব এসিসটেন্ট পদে নিযে়াগকৃত ব্যক্তিটি বর্তমানে গোপালগঞ্জে বিনা উপকেন্দ্রে কর্মরত রয়েছেন।
বিগত ৪ বছরে বিনা’র সকল নিয়োগ এবং পদোন্নতিতে ড.মোঃ আবুল কালাম আজাদ সরাসরি হস্তক্ষেপ করে তার পছন্দের লোকদেরকে সাবেক কৃষি মন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাক ও ড.আব্দুস শহীদের মাধ্যমে সকল সুবিধা প্রাপ্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কোটা সংস্কার ও স্বৈরাচার সরকার পতনের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যখন তুঙ্গে ঠিক ওই সময়ে গত ০৪-০৮-২০২৪ ইং তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পক্ষে রাজধানীর ফার্মগেটে “হাসিনায় আস্থা” প্লে-কার্ড নিয়ে তথাকথিত শান্তি সমাবেশে সদলবলে ড. মোঃ আবুল কালাম আজাদ অংশগ্রহণ করেন। এমনকি ওই দিন হাসিনার পক্ষে ব্যানার নিয়ে সম্মুখ সারিতে ফার্মগেটে তথাকথিত শান্তি মিছিলে তিনি নেতৃত্ব দেয়েছেন। এ ছাড়াও ছাত্রলীগের ক্যাডার বিজ্ঞানীদের সাথে নিয়ে সদলবলে তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মাজারে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। বিনা’র সাবেক পরিচালক ড. মোঃ আবুল কালাম আজাদ বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হয়ে কতিপয় দুর্নীতিবাজদের নিয়ে অপশাসন ও মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি কৌশলে বিএনপি পন্থী বিনা’য় কর্মরত মুর্তিকা বিজ্ঞান শাখার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাহাবুবুল আলম তরফদার টুটন, কৃষি প্রকৌশল বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হাছানুজ্জামান, উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রেজা মোঃ ইমন, কৃষি অর্থনীতি শাখার মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হাবিবুর রহমান, উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নুরুন নবী মজুমদার, মৃর্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের পিএসও ড. মাহাবুব খান মুন্নাকে হাত করে অপকর্মের রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন। উল্লেখিত বিজ্ঞানীগণ বিএনপি পন্থী হলেও সামান্য লোভের বশবর্তী হয়ে দুর্নীতিবাজ ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর ডিজি আবুল কালাম আজাদকে শেল্টার দিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন। তাদের কর্মকান্ডও এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পরেছে। নিজের সকল অতীত কর্মকান্ড মুছে ফেলার জন্য ও বর্তমান অন্তবর্তী কালীন সরকারের আস্থা অর্জন করার জন্য নিজেকে আওয়ামী বিরোধী বলে প্রচার করে যাচ্ছেন দুর্তবাজ আবুল কালাম আজাদ । জামাত বিএনপি’র নেতা কর্মীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলার নানা ভাবে চেষ্টা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। স্বীয় পদে বহাল থাকার জন্য বিএনপি পন্থী বিজ্ঞানীদেরকে হাতে রাখার জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের প্রধান হিসাবে নিয়োগ প্রাপ্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। চতুর ডিজি ড.মোঃ আবুল কালাম আজাদ বিনা গবেষণা শক্তিশালী করণ প্রকল্প থেকে ড.শহিদুল ইসলামকে সরিয়ে ড. মাহাবুবুল আলম তরফদার টুটনকে প্রকল্প পরিচালক পদে নিযোগ দিয়েছেন। সিসিটিএফ প্রকল্প থেকে ড.শাকিনা খানমকে সরিয়ে ড. হাছানুজ্জামানকে প্রকল্প পরিচালক করেছেন। ড. শাকিনার সাথে ডিজি ড. মোঃ আবুল কালাম আজাদের বিনা ধান-২৫ এর উদ্ভাবন ও গবেষণা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ চলে আসছে। তেল জাতীয় প্রকল্প থেকে ড. রফিকুল ইসলামকে সরিয়ে ড. রেজা মুহাম্মদ ইমনকে প্রকল্প পরিচালকের দাযি়ত্ব দিয়েছেন। এ ছাড়া বিনা শক্তিশালী করণ প্রকল্পের ডিপিডি পদে ড. আশিকুর রহমানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি ডিজি’র দাযি়ত্ব পাওয়ার পর বিনা’র গবেষণামূলক কাজকর্মকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একটি নতুন প্রকল্পের প্রস্তাব বা অনুমোদন কোনটাই করতে পারেননি। বরং ডিজি পদে বহাল থাকার জন্য একের পর এক নানান কুট কৌশল অবলম্বন করছেন। দিবালোকের মত সত্য সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ নেতাদের প্রভাব খাটিযে় ড.মোঃ আবুল কালাম আজাদ নিজের যোগ্যতা না থাকা সত্বেও তিনি তদবিরের জোরে ডিডি (প্রশাসন ও সাপোর্ট সার্ভিস) পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় গ্রেড-২ কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন। ড.মোঃ আবুল কালাম আজাদ সাবেক কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুস শহীদ এবং আওয়ামী লীগ নেতা কৃষিবিদ বাহা উদ্দিন নাসিম ও জাহাঙ্গীর কবির নানকের প্রভাব খাটিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে বিনা’র পরিচালক (প্রশাসন ও সাপোর্ট সার্ভিস) এর ক্ষমতা প্রয়োগ করে বিগত ৪ বছর নানান অন্যায় অপকর্ম ও ব্যাপক দুর্নীতি করছেন। এমনকি উল্লেখিতদের আশীর্বাদপুষ্ট এবং আস্থাভাজন হওয়ার কারণে বিনা’র ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ বাগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন। এখন খোলস পাল্টিয়ে নুতন রূপ ধারণ করে মহাপরিচালকের পদে বীরদর্পে বহাল তবিয়তে আছেন। এবং কৌশলে সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন কাজ করে যাচ্ছেন।

ড.মোঃ আবুল কালাম আজাদ ক্ষমতার দাপটে বিগত সময়ে সুবিধাবঞ্চিত বিনা’র বিজ্ঞানী-কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের অনেককে ভিন্ন ভিন্ন পন্থায় হয়রানী, অত্যাচার, নিপীড়ন এবং মানষিক ভাবে নির্যাতন করেছেন। তার বঞ্চনার শিকার অনেকে এখনো সুবিধাবঞ্চিত অবস্থায় কাজ করছেন। ড. মোঃ আবুল কালাম আজাদ এর বিরুদ্ধে সরকারের উচ্চ পর্যায়, দুদক, এমনকি মন্ত্রণালয়ে একাধিক অভিযোগ থাকলেও রহস্যজনক কারণে অদ্যাবধি কোন প্রকার তদন্ত না হওয়ায় তিনি হয়ে উঠেছেন অপ্রতিরোধ্য । এমনকি ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হওয়া সত্বেও তাকে ডিজি পদ থেকে কেনই বা অপসারণ করা হচে্ছ না এনিয়ে নানান গুনজন। ফ্যাসিস্ট দোসরদের অপ্রতিরোধ্য পথচলার ফলে বিনা’তে চলছে চরম হতাশা ও অস্থিরতা। জাতীয় কৃষি গবেষণামূলক এ প্রতিষ্ঠানটি অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিবাজ পেতাত্মাদের অবস্থান বলবত থাকার ফলে সকল কর্মতৎপরতা এখন মুখ থুবডে় পড়েছে বলে অভিযোগে জনাযায়। সকল গবেষণামূলক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে দৃশ্যত। বিজ্ঞানীদের মাঝে কর্মের প্রতি ক্রমান্বয়ে অনিহা সৃষ্টি হচ্ছে। ইতিমধ্যে একাধিক পত্রিকায় ফ্যাসিবাদের দোসর ড.মোঃ আবুল কালাম আজাদ এর বিরুদ্ধে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদগুলোতে তার অন্যায় অপকর্ম ও দুঃশাসনের সত্যতার প্রমাণ মিলেছে।

জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যত্থানের মাধ্যমে দেশ নুতন করে মুক্ত স্বাধীন হলেও বিনা এখনো ফ্যাসিবাদের দোসর ড.মোঃ আবুল কালাম আজাদের হাত থেকে মুক্ত হয়নি। অবিলম্বে তাকে বিনা থেকে অপসারণ করে তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ সময়ের দাবী হয়ে উঠেছে। বিনা’র ডিজিকে তার অতীত কর্মকান্ডের কারণে পদত্যাগে বাধ্য না করলে বিনায় যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনার আশংকা করছেন অনেকেই। ঘাপটি দিয়ে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসর এর কারণে বিনা’র গবেষণামূলক কার্যক্রমসহ সকল কাজ দারুনভাবে ব্যাহত হচ্ছে ।

অনেকেই বলেন বৈষম্য মুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিনাকে রূপান্তরিত করতে হলে বর্তমান ডিজির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ ব্যাপারে বিনা’র এবিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করতে বিনা’র মহাপরিচালক ড. মোঃ আবুল কালাম আজাদকে জিজ্ঞেস করলে তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিনা’য় কর্মরত বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে নারাজ। নিরপেক্ষ তদন্ত করলে থলের বিড়াল বের হয়ে আসবে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছেন।