আদালতে বিচারাধীন ভরনপোষণ মামলা প্রত্যাহারে বাধ্য করতে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলায় আবারো শিক্ষক লাঞ্ছিতের অভিযোগ উঠেছে মুক্তাগাছা মহাবিদ্যালয়ের কম্পিউটার ডেমোন্সট্রেটর শেখ মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জুয়েলের বিরুদ্ধে।
গত বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) ১টা ২০ মিনিটে ৯২নং খিলগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটছে বলে জানা গেছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নারী শিক্ষক ও শেখ মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জুয়েল সম্পর্কে স্বামী স্ত্রী।
স্বামী শেখ মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জুয়েল স্ত্রী সন্তানদের ভরনপোষণ না দেয়ায় স্ত্রী বাদী হয়ে বিজ্ঞ আদালতে ভরনপোষণ মামলা দায়ের করেন। যার নং-৮৪/২০২১।
এর আগে গত (১৩ জুলাই) শেখ মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জুয়েল খিলগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণী কক্ষে পাঠদানকালে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সামনে নারী শিক্ষককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধর করে লাঞ্ছিতে করার অভিযোগ রয়েছে।
পূর্বের ঘটনায় মুক্তাগাছা মহাবিদ্যালয়ের সভাপতি মেয়র বিল্লাল হোসেনের বরাবর লিখিত অভিযোগ করলে তিনি ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পরেও রহস্যজনক কারনে কোন ব্যবস্থা নেননি।
মুক্তাগাছা মহাবিদ্যালয়ের কম্পিউটার ডেমোন্সট্রেটর শেখ মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জুয়েলের বিরুদ্ধে আদালতে ভূয়া প্রভাষক পরিচয়, নারী কেলেঙ্কারি, অবৈধ জমি দখল, প্রতিবেশী নীরিহ মানুষদের মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে হয়রানিসহ বিভিন্ন অপকর্মের সংবাদ জাতীয় বিভিন্ন সংবাদপত্রসহ স্থানীয় ও অনলাইনে সংবাদ প্রকাশ হলেও অদৃশ্য কারনে বহাল তবিয়তে থেকে অপরাধের সর্গরাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ততসময় সংবাদ প্রকাশের জেরে শেখ মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জুয়েল একজন সংবাদকর্মীর নামে মুক্তাগাছা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন, পরে তা প্রত্যাহার করে স্ত্রী সন্তানদের ভরনপোষণ ও নিজেকে সংশোধন করে নিবেন বলে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় তিনি প্রতিবাদ ও সংবাদের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন।
মামলার বাদী জানিয়েছেন, ১১ অক্টোবর আমার ভরনপোষণ মামলার তারিখ ছিল, আদালতে যাওয়ার সময় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মেইন রোডে আমাকে পেয়ে হুমকি দিয়ে বলে আজ তুই কোটে দাঁড়ালে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলব। আমি তার কথা না মেনে আদালতে যাওয়ায় কোর্টের সামনে দুই তিন জন অপরিচিত লোক নিয়ে আদালতে সামনে আমাকে গালিগালাজ করে মারধরের চেষ্টা চালায়, পরে আদালতের সামনে থাকা দুই তিন জন রিক্সা চালক ও পথচারী তাকে ফিরিয়ে দেয়, পরে একজন গণমাধ্যম কর্মী রিক্সা দিয়ে টাউন হল মোড়ে এগিয়ে দিয়ে সহায়তা করে। আদালতে আমাকে কিছু করতে না পেরে পরের দিন বৃহস্পতিবার স্কুল চলাকালীন শিক্ষার্থীদের সামনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধর করে আমার শিশু বাচ্চা পূর্নতাকে নিয়ে যায়।এর ২ দিন পর ১৪/১০/২০২৩ তারিখ বিকেল ৩ টার দিকে সংবাদ প্রকাশের জেরে একজন সংবাদ কর্মী কে খুন জখম ও মিথ্যা মামলার হুমকী দেয়।পরে ওই সংবাদ কর্মী মুক্তাগাছা থানায় উক্ত বিষয়ে একটি সাধারন ডায়রি করেন যার নং ৭২৬।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুক্তাগাছা মহাবিদ্যালয়ে একাধিক শিক্ষক জানান অধ্যক্ষ নিজের সার্থে আক্তারুজ্জামান জুয়েলসহ কতিপয় স্টাফদের বিশেষ সুবিধা ও ছাড় দিয়ে থাকেন।
মুক্তাগাছা পৌর শহর ও আমোদপুর এলাকার স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছেন মহাবিদ্যালয়ের কম্পিউটার ডেমোন্সট্রেটর শেখ মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জুয়েলের অপকর্ম থামছেইনা। তার স্ত্রী একজন স্কুল শিক্ষক হয়েও বার বার প্রকাশ্য নাজেহাল হচ্ছেন, লাঞ্ছিত হচ্ছেন। ঐ শিক্ষকের পাশে কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালেই তাকে পরকীয়াসহ বিভিন্ন ধরনের অপবাদ দিয়ে দুরে সরানোর চেষ্টা করে, অনেক সম্মানি ব্যাক্তিরা আক্তারুজ্জামান জুয়েলের অপবাদে নিজের আত্মসম্মান বাচাঁতে পিছিয়ে যান, অপবাদ দেওয়া আক্তারুজ্জামান জুয়েলের একটা হাতিয়ার।
সূত্র বলছে, যৌতুক লোভী আক্তারুজ্জামান জুয়েল তার প্রথম স্ত্রী ইসমত আরা বেগমকে পৈশাচিক অমানুষিক নির্যাতন করে একটি কন্যা সন্তানসহ সংসার ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছে। তার প্রথম স্ত্রী বর্তমানে ময়মনসিংহ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগে চাকরি করেন।
অভিযোগ রয়েছে, এই শেখ মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জুয়েলকে যৌতুক না দেয়ার কারনে ২০১৭ সালে নিজের স্ত্রীর নামে কুৎসা, নোঙরা ভাষায় লিফলেট ছাপিয়ে দেয়ালে দেয়ালে লাগিয়ে অপপ্রচার করেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শেখ মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জুয়েল একজন মামলাবাজ, তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই তাকে মিথ্যা মামলায় হয়রানি করে।
একই দিনে কলেজে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর, আদালতে হাজিরা ও প্রভাষক পরিচয়ে প্রতারণা বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলে মুক্তাগাছা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মুঠো ফোনে বলেন গভর্নিং বডির সভাপতির অনুমতি ছাড়া আমি কোন তথ্য দিতে পারব না, আপনি সভাপতি মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করেন।একই দিনে কলেজে হাজিরা ও আদালতে হাজিরা বিষয়ে আক্তারুজ্জামান জুয়েলকে সহযোগীতার বিষয়টিও তিনি স্বীকার করেন।জুয়েলের অপকর্মের বিষয়ে তিনি বলেন,সে আমার স্টাফ,তার বিষয়টা ত আমাকে দেখতে হবে।
প্রভাষক পরিচয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, আক্তারুজ্জামান প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ না হলেও তিনি ক্লাস নেন, তবে কোথাও পরিচয় দিতে গেলে সঠিক পরিচয় দেওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি। এসময় তিনি নিজেকে মুক্তাগাছা প্রেস ক্লাবের একজন সদস্য হিসেবে দাবী করেন।
এবিষয়ে মুক্তাগাছা মহাবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি মেয়র মোঃ বিল্লাল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি তবে ঐ শিক্ষক পরে আর আসেনি বলে ব্যাবস্থা নেওয়া হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার ১২ অক্টোবর আবারো শিক্ষক লাঞ্ছিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, থানায় অভিযোগ দিতে বলেন, আমি ওসিকে বলে দিব। ওকে কলেজ থেকে বাদ দিয়ে দিব।
মন্তব্য