কৈশোর কালীন পরিবর্তনের এই সময়টা হলো যখন শিশুরা ধীরে ধীরে প্রাপ্তবয়স্কে রূপ নিতে শুরু করে, সাধারণত ১১থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যে। এই সময়টা কালারফুল, উত্তেজনাপূর্ণ হলেও, অনেক সময় বিভ্রান্তিকর ও কঠিন হতে পারে। কিশোর-কিশোরীরা শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তনটার কারনে মানসিকভাবে নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যায়। এ সময় তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। একা হয়ে যায়। বাবা মা বা ভাই-বোনদের সাথে দূরত্ব বাড়ে। নিরব হয়ে যায়। আবার অনেকে অনেক বেশি কৌতুহলী হয়, চঞ্চলতা বাড়ে। অনেক বেশি কৌতুহলের কারণে বিপথগামী হয়, আবার নিরব হয়ে যাওয়ার কারনে একাকিত্ব বোধ করে। এ সময় সবচেয়ে যেটা বেশি প্রয়োজন,সেটা হলো বাবা-মায়ের সান্নিধ্য এবং বন্ধুত্ব শুলভ আচরণ। কিন্তু আমাদের নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবা মায়েরা এটা বুঝতে চায় না। তারা ভেবে নেয় সকল দায়িত্ব স্কুলের। আসলে একজন শিক্ষার্থী কতক্ষণ আর স্কুলে অবস্থান করে। বেশিরভাগ সময়ে তারা বাবা মায়ের সাথে, পরিবারের সাথে থাকে।সেক্ষেত্রে দায়িত্বটা পরিবার সর্বোপরি বাবা-মা এর।
একটি উন্নয়ন সংগঠনে কাজ করার সূত্রে আমি অনেকগুলো স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথে দীর্ঘদিন বিভিন্ন ধরনের কাজ করার সুযোগ হয়েছে। সেই সুত্রে দীর্ঘদিনের পরিচিত কাস্টমস্ একাডেমী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম দত্ত অত্যন্ত দক্ষ, স্মার্ট,দায়িত্বের প্রতি কমিটেড এবং প্রানবন্ত একজন মানুষ। সাথে সহকারী প্রধান শিক্ষক সুশান্ত কুমার দাস দক্ষ শিক্ষক। সংগঠনে কাজ করার সময় কিশোর-কিশোরীদের নানা বিষয় নিয়ে শ্রেণীকক্ষে অ্যাওয়ারনেস সেশন করাতাম। কিছুদিন আগে জনাব মেরি দত্ত আমার সাথে ওনার বিদ্যালয়ের কিশোর-কিশোরী শিক্ষার্থীর সমস্যা শেয়ার করলেন, এবং বললেন উনি কিছু বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন।অনুরোধ করলেন যে, কৈশোর কালীন টানা পড়েন, সংকট নিয়ে ওনার স্কুলে অ্যাওয়ারনেস সেশন করাতে। আমি কাজ পাগল মানুষ, এবং এই বয়সের শিক্ষার্থীদের সাথে কাজ করতে আমার খুব ভালো লাগে। এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম। উনার সাথে কথা বলে কি কি বিষয়ে কথা বলতে হবে সে বিষয়টা ঠিক করলাম। এবং বিগত ২০-২২ মে তিনটি ক্লাশের ৬ টি সেকশানে প্রায় ৪৫০ জন শিক্ষার্থীর সাথে অ্যাওয়ারনেস সেশন করেছি। আ্যাওয়ারনেস সেশন করতে গিয়ে যেটা তাঁদের কাছ থেকে জানতে পারলাম।
* শিক্ষার্থীদের সাথে বাবা-মা এর মানসিক দূরত্ব, বাবা মায়ের অজ্ঞতা, পরিবারে আচরণগত সমস্যা, পারিবারিক কলহ, একাকীত্ব, ভুল বন্ধু নির্বাচন, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ, সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা, বাবা মায়ের অতি আদর, কিছু ক্ষেত্রে অতি শাসন, সামাজিক অস্থিরতা, রাজনৈতিক পারিপার্শ্বিক অস্থিরতা। এছাড়াও আরও অনেকগুলো বিষয় আছে।
অভিভাবকদের প্রতি আমার অনুরোধ। বিদ্যালয়ের এই কয়েক ঘন্টায় শিক্ষকগণ সব দায়িত্ব পালন করতে পারেননা। বেশিরভাগ সময় সন্তান আপনাদের কাছেই থাকে। এই দায়িত্ব আপনার। আপনার সন্তান কোথায় যায়, কার সাথে মিশে, পড়ালেখায় মনোযোগ আছে কিনা, স্কুলে সময়মত আসা এবং বাসায় ঠিকমত যাচ্ছে কিনা। বিশেষ করে যারা মেয়েদেরকে বোরকা, নেকাব পড়াচ্ছেন সেটার মিস ইউজ করছে কিনা। আপনার টাকা পয়সা, ক্ষমতা আছে আপনি অতি আদর দিয়ে আপনার সন্তানকে বাঁদর বানাচ্ছেন কিনা। শিক্ষকগণ শাসন করলে আপনারা সেটা নিয়ে প্রতিবাদ করে সন্তান কে আরও অপরাধমুখী করছেন কিনা, আপনার সন্তানের অপরাধের দায়ভার কখনও ই শিক্ষকের উপর চাপাবেন না। এতে হয় কি জানেন, ওই শিক্ষার্থী আরও বেশি প্রশ্রয় পেয়ে যায়। তার মধ্যে এই ধারণা তৈরি হয় যে, সে যেই অপরাধী ই করুক না কেন তার বাবা-মা এর অতি ভালবাসার কারনে সে পার পেয়ে যাবে। সকল অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ শুধুমাত্র গোল্ডেন জিপিএ 5 এবং টাকার মেশিন বানানো চিন্তা না করে, সন্তানকে মানুষ তৈরী করেন।
মন্তব্য