ময়মনসিংহে এক সময়ের আতংক ও আলোচিত ১৫ ক্রসফায়ারের সেই ডিবি ওসি মোঃ আশিকুর রহমান এর বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করা হয়েছে। আশিক সহ ১৭ পুলিশের বিরুদ্ধে আলোচিত মামলার আবেদন করেন নগরীর পুরোহিতপাড়ার হারুন অর রশিদ। তিনি ২০১৮ সালে ২৪ মে বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে ডিবির ক্রসফায়ারে নিহত রাজন মিয়ার (২৫) বাবা। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এ.কে.এম রওশন জাহান গত রোববার বিকেলে দীর্ঘ শুনানি শেষে অভিযোগ আমলে নেন।
পুলিশ পরিদর্শক পিএসএম মোস্তাছিনুর রহমান পিপিএম সোমবার রাতে প্রতিবেদককে জানান, বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) আদেশ দিয়েছেন। মামলার আবেদন কোতোয়ালি মডেল থানায় পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান, তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আদালত পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবেন।
অন্যদিকে গতকাল রাত সাড়ে ১০টায় কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম প্রতিবেদককে বলেন, মামলার আবেদন এখনো থানায় পৌঁছেনি। আবেদন পাওয়ার পর তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, মো. আশিকুর রহমান ৫ জুলাই ২০১৭ তারিখে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) দায়িত্ব নেন। ওসি ইমারত হোসেন গাজীকে সরিয়ে আলোচিত আশিককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর আগে ইমারতকে কৌশলে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছিল।
উল্লেখ, রেঞ্জ ডিআইজি নিবাস চন্দ্র মাঝি এবং এসপি সৈয়দ নূরুল ইসলামের আশির্বাদে আশিক ময়মনসিংহ নগরীতে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে ওঠেন। দমন-নিপীড়ন চালান আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল বিএনপির ওপর। দুই কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে মত্ত থাকেন টাকার নেশায়। তাকে পেয়ে বসে কোটি কোটি টাকার নেশায়। মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূলের নামে শুরু করেন ক্রসফায়ার। শুরুতে ৫-৬ জন মাদক কারবারীকে ক্রসফায়ার দিয়ে আশিক প্রশংসায় ভাসেন। পরে শুরু হয় ‘ফরমায়েশী ক্রসফায়ার’। প্রতিটি ক্রসফায়ার থেকে গড়ে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন ধুরন্ধর আশিক। ক্রসফায়ার থেকে ছাড়ার নাম করে নগদ টাকা ও সোনার গহনা হাতিয়ে নেন। কয়েকজনের কাছ থেকে কোটি টাকাও নেওয়া হয়।
মামলার আবেদনে উল্লেখিতরা হলেন, পুলিশ পরিদর্শক মোখলেছুর রহমান, এসআই ফারুক আহমেদ, পরিমল চন্দ্র দাস ও আক্রাম হোসেন, এএসআই আব্দুল মজিদ, জিন্নাত হাসান মানিক, জাকির হোসেন ও জিল্লুর রহমান, কনস্টেবল কাউসার হাবিব, গোলজার হোসেন, সোহরাব আলী, সাইফুল ইসলাম, সেলিম মিয়া, রাশেদুল হাসান, সানোয়ার হোসেন ও জহিরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি ওসি মো. আশিকুর রহমান বর্তমানে ঢাকায় কর্মরত। মামলার আবেদনে বলা হয়, ২২ মে ২০১৮ তারিখ মঙ্গলবার মধ্য রাতে ডিবির ওসি মো. আশিকুর রহমানের উপস্থিতিতে একদল পুলিশ পুরোহিতপাড়ার বাসা থেকে রাজনকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। বাবা হারুন ও পরিবারের সদস্যরা ২ দিন ডিবি অফিসে ধরনা দিলেও রাজনকে ছাড়া হয়নি। ওসি আশিক এক পর্যায়ে হারুনের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। তিনি টাকা দিতে ব্যর্থ হন। ২৪ মে ২০১৮ তারিখ বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে বাসার পাশে রেলওয়ের প্রাচীরের কাছে নিয়ে বুক ও পেটে গুলি চালিয়ে নির্মমভাবে রাজনকে হত্যা করে।
মন্তব্য